যতীন সরকার

প্রচণ্ড দারিদ্র্যের মধ্যে তাঁকে পড়াশুনা করতে হয়েছে। তাঁর বাবা জ্ঞানেন্দ্র চন্দ্র সরকারের হেমিওপ্যাথি ডাক্তারি ছাড়া আর কোনো আয়ের উৎস ছিল না। তাঁদের গ্রাম চন্দ্রপাড়ার পার্শ্ববর্তী দলপা ও নন্দীগ্রাম ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। পাকিস্তান হওয়ার পরপর ওই এলাকার লোকজন ব্যাপক হারে ভারতে অভিবাসী হয়। ফলে তাঁর বাবার ডাক্তারি পেশার প্রসার কমে আসে। তাঁর পরিবার দারুণ আর্থিক দৈন্যের মধ্যে পড়ে যায়। ফলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই রামপুর বাজারে তাঁকে দোকান খুলে বসতে হয়। বাজারে চাটাই বিছিয়ে তিনি ডাল, পান, বিড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি বিক্রি করে সংসারের প্রতিদিনের খরচ জোগাতে থাকেন।

১৯৫৪ সালে মেট্রিক পরীক্ষা দিলেও আইএ ভর্তির টাকা জোগাড় করার জন্য তাঁকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। টিউশনি করে টাকা জমিয়ে ১৯৫৫ সালে আইএতে ভর্তি হন নেত্রকোনা কলেজে। শহরে লজিং থেকে চালিয়ে যান লেখাপড়া। এই কলেজের ছাত্রসংসদে তিনি সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে দুর্ভিক্ষের সময় যে পরিবারে লজিং থাকতেন সে পরিবারের অভাবের সংসারে অর্থের যোগান দেওয়ার পাশাপাশি অনেকদিন সবার সাথে তাঁকেও থাকতে হয়েছে অনাহারে। নেত্রকোনা কলেজ থেকে আইএ পাশের পর ১৯৫৭ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে বিএ ভর্তি হন। ময়মনসিংহ শহরে লজিং থেকেই শুরু হয় তাঁর বিএ পড়া। ১৯৫৯ সালের বিএ পরীক্ষা দিয়েই শিক্ষকতা শুরু করেন নেত্রকোনার আশুজিয়া হাইস্কুলে। পরে বারহাট্টা থানা সদরের হাইস্কুলে শিক্ষকতা। এই স্কুলেই কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর ছাত্র ছিলেন। ১৯৬১ সালের গোড়া পর্যন্ত প্রায় দুই বছর শিক্ষকতা করে টাকা জমিয়ে বাংলায় এমএ ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও তাঁকে কষ্ট করে পড়াশুনার খরচ যোগাতে হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সরাসরি শিক্ষক ছিলেন ড. এনামুল হক, মোস্তফা নূরুল ইসলাম। ১৯৬৩ সালের নভেম্বরে এমএ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৩-এর অক্টোবরেই বাংলার শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর হাইস্কুলে। ১৯৬৪ সালের আগস্টে ময়মনসিংহ শহরের নাসিরাবাদ কলেজে বাংলা বিষয়ে প্রভাষক নিযুক্ত হন। ২০০২ সালে এই কলেজ থেকেই তিনি অবসরে যান।