কর্নেল তাহের



ঈদুল আজহার আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি বই লেখার বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন স্যারের সঙ্গে। কথার ফাঁকে তিনি আমাকে জানান, ১৮ নভেম্বর টিএসসিতে কর্নেল তাহেরমেলা অনুষ্ঠিত হবে। আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে ওই মেলায় উপস্থিত থাকবো বলে জানাই এবং ১৪ নভেম্বর তাহেরের জন্মদিন নিয়ে কিছু লিখার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু নেত্রকোনার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩শ’ পৃষ্ঠার যে বইটি লিখছি; মূলত তার কারণেই সঠিক সময়ে জন্মদিনের লেখা হয়ে ওঠেনি। ফলে ১৪ নভেম্বরই কম্পিউটারের সামনে বসি কিছু লিখতে। কিন্তু কী লিখবো কর্নেল তাহেরকে নিয়ে? তার সম্পর্কে কিছু বলতে গেলেইতো হৃদয় কেঁপে ওঠে। মনে পড়ে যায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের কথা। ওই দিনটির কথা উল্লেখ করে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাকে হত্যা করে।

নভেম্বর মাসটি কর্নেল তাহেরের জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে একদিকে যেমন তার জন্ম, অপরদিকে সংগ্রামী জীবনের পথ চলা। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সু চক্র তাকে বাঁচতে দেয়নি। আর তাইতো দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০১১ সালের ২২ মার্চ আবু তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, তাহের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার। ঠাণ্ড মাথায় এর পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। রায়ে সামরিক আদালতে বিচারকে প্রহসনের ‘নাটক’ উল্লেখ করে তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ সামরিক ট্রাইব্যুনাল যখন তার বিচার শুরু করে, সেদিন কর্নেল তাহের বীরদর্পে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কিন্তু বার বার বিচারক তার বক্তব্যে বাধার সৃষ্টি করেছিলেন। বক্তব্যের শুরুতেই তাহের বলেছিলেন- ‘আপনাদের সামনে দণ্ডায়মান এই মানুষটি, যে মানুষটি আদালতে অভিযুক্ত- সেই একই মানুষ এ দেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য রক্ত দিয়েছিল, শরীরের ঘাম ঝরিয়েছিল। এমনকি নিজের জীবন পর্যন্ত পণ করেছিল। এটা আজ ইতিহাসের অধ্যায়। একদিন সেই মানুষটির কর্মকা- আর কীর্তির মূল্যায়ন ইতিহাস অতি অবশ্যই করবে। আমার সকল কর্মে, সমস্ত চিন্তায় আর স্বপ্নে এই দেশের কথা যেভাবে অনুভব করেছি, তা এখন বোঝানো সম্ভব নয়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। এই দেশের সঙ্গে আমি রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। আর এরা কিভাবে অস্বীকার করে এই দেশের অস্তিত্বে আমি মিশে নেই। যে সরকারকে আমিই ক্ষমতায় বসিয়েছি, যে ব্যক্তিকে আমিই নতুন জীবন দান করেছি, তারাই আজ এই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছে। এদের ধৃষ্টটা এতো বড়ো যে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো আরো অনেক বানানো অভিযোগ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থা করেছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সবই বিদ্বেষপ্রসূত, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক, সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি সম্পূর্ণ নিরপরাধ।’

হ্যাঁ, যুগে যুগে নরপিশাচ, বিশ্বাসঘাতকদের কাহিনী আমরা শুনে আসছি। প্রথম দিকে আমরা যে যাই বলি না কেন, পরবর্তী সময়ে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। যেমনটি ৩৫ বছর পর ফিরে এলো শহীদ তাহেরের জীবনে; তিনি কোনো অন্যায় করেননি, ক্ষমতার লোভে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তার এ বিশ্বাসবোধ নিয়েই সামরিক ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহের।

১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর এবং ২০১১ সালের ওই তারিখের মধ্যে চল্লিশ বছরের পার্থক্য। ১৪ নভেম্বর যে ব্যক্তির জন্মদিন অতিবাহিত হয়েছে তার সম্পর্কে নতুন করে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তবে একটি যুদ্ধকাহিনী সংক্ষিপ্তভাবে না বললেই নয় এ কারণে যে, জন্মদিনেই এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ কামালপুর যুদ্ধ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। আর ওই দিনই পা হারান শহীদ কর্নেল আবু তাহের।

তার অনুজ সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক (বার) এ যুদ্ধ বর্ণনা করে বলেন, ‘জন্মদিনটি তিনি বেছে নিলেন কামালপুর আক্রমণের জন্য। এর আগেও আমরা বেশ কয়েকবার কামালপুর আক্রমণ করে ব্যর্থ হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দেওয়া হলো চারদিক থেকে কামালপুরকে ঘিরে ফেলো। আক্রমণের পুরো দায়িত্ব নিলেন কর্নেল তাহের। রাত ১১টার দিকে কামান্ডাররা কমান্ড পোস্টে অবস্থান নিলেন। ২১টি ফিল্ডগান ১৩টি মিডিয়াম গান এবং আরও কিছু হেভি গান নিয়ে রাত ১টায় গোলা নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে কর্নেল তাহের আক্রমণের সূচনা করলেন। রাত ৩টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ ভালো অবস্থান নিতে পারলেন। মুক্তিযোদ্ধারা তখন কামালপুর ক্যাম্প থেকে মাত্র ৩শ’ গজ দূরে। পাকিস্তানিদের বাঙ্কারগুলো দখলের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কার ছেড়ে আখ ক্ষেতে পালিয়ে যাচ্ছিল। ওদের টার্গেটে আনার জন্য তখন রাতের আকাশে red flair ছোড়া হচ্ছিল। ‘জয়বাংলা-জয়বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ আরও শক্তিশালী করে তুলছিলেন। এ সময় কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মিজান ওয়াকিটকিতে কর্নেল তাহেরকে জানান, তিনি পাকিস্তানিদের বাঙ্কারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই কর্নেল তাহেরের সঙ্গে লেফটেন্যান্ট মিজানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কর্নেল তাহের তখন কমান্ডার মিজানের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। কর্নেল তাহের হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই সামনে এগিয়ে যাবেন। কমান্ড পোস্ট ছেড়ে আমরা ক’জন তার সঙ্গে রইলাম। ইন্ডিয়ান আর্মির মেজর এস, আর, সিংকে তিনি বললেন, রিকোয়েলেম রাইফেল জিপের পেছনে টো করে নিয়ে আসতে এবং কামালপুর ক্যাম্পে প্রধান বাঙ্কার চার্জ করতে। আমরা বর্ডার রোড ক্রস করেই কমান্ডার মিজানকে পেয়ে গেলাম। মুক্তিযোদ্ধারা সেক্টর কমান্ডারকে নিজেদের মাঝে পেয়ে আরো সাহসী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানিদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি কামালপুরের পতন তখন নিশ্চিত। পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কার ছেড়ে আখ ক্ষেতে আশ্রয় নিয়েছে। আমি একটি বাঙ্কারের ওপর দাঁড়িয়ে ওয়াকিটকিতে অন্যদের এ সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছি। কর্নেল তাহের একটি বাঙ্কারের পাশে পজিশন নিয়ে কমান্ড করছিলেন। হঠাৎ একটি শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি, কর্নেলের একটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন।’

নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামের সাবেক রেলওয়ে কর্মকর্তা মরহুমদ মহীউদ্দিন আহমেদের পুত্র কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। বাবা রেলওয়েতে চাকরি করার সুবাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুর রেলওয়ে স্টেশনে নানার বাসায় আবু তাহের যখন জন্ম নেন, তখন বাবা নোয়াখালীর হরিনারায়ণপুরে কর্মরত।

আবু তাহের ১৯৫৫ সালে কুমিল্লা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। সেখানে থাকার সময় তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে তার বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিল। ঠাকুর সে সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ম্যাট্রিক পাস করে তিনি সিলেটের মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজে ভর্তি হন। সেখানে মার্কসীয় সাহিত্যের সঙ্গে তাহেরের পরিচয় ঘটে। তার অনুজ ড. আনোয়ার হোসেনের ভাষায়, ‘তাহের ভাইয়ের এমসি কলেজের সহপাঠী মোহম্মদ হোসেনের কাছে শুনেছি, কলেজে থাকার সময়েই ১৯৫৬ সালেই তাহের ভাই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম গড়ে তোলার কথা ভাবতেন। বলতেন, ‘স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করতে হবে আমাদের।’

হোসেন সাহেবের মতে, তাহেরকেই তারা আগামী দিনের সে লড়াইয়ের নায়ক ভাবতেন। সে কারণে একটি বিশেষ সম্বোধনও করা হতো তাকে।

১৯৫৯ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করার পর কিছুদিন চট্টগ্রাম মিরেরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের একজন ঘনিষ্ট সহযোগী। বস্তুতঃ প্র্রধান শিক্ষকের সংস্পর্শে থেকেই আবু তাহের বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণের ছাত্র থাকাবস্থায় সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে গ্রহণ করেন কমান্ডো প্রশিক্ষণ। তখন পাক-ভারত যুদ্ধে শিয়ালকোট রণাঙ্গনে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য পুরস্কৃত হন।

তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সুদক্ষ কমান্ডো অফিসার। ১৯৬৯ সালে আমেরিকার ফোর্টব্রাগ ও কোট বেনিং থেকে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ ও সামরিক বিদ্যায় ডিগ্রী লাভ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কোয়েটার স্টাফ কলেজে কর্মরত ছিলেন। ২৫ জুলাই অ্যাবোটাবাদ দিয়ে পালিয়ে ভারতে চলে আসেন। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। জরুরি বৈঠক করে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী তাকে এগারো নম্বর সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব দেন। ১৪ নভেম্বর ধানুয়া-কামালপুর রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আবু তাহের এক মুখোমুখি যুদ্ধে উপনীত হন। তখন হানাদার বাহিনীর একটি সেলের আঘাতে তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসেন এবং প্রথমে সেনাবাহিনীর এডজুটেন্ট জেনারেল নিযুক্ত হন। পরে কুমিল্লা সেনানিবাসের অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন ব্যারাকবন্দী সেনাবাহিনীর বদলে কর্মভিত্তিক গণবাহিনী গড়ে তোলার প্রশ্নে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে সরকার তাকে সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন। কিন্তু সরকারের ইচ্ছেমতো রায় না দিয়ে তিনি মেজর জলিলকে নির্দোষ বলে রায় ঘোষণা করলে সরকারের রোষানলে পড়েন। এক পর্যায়ে তাহের জাসদ রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। এতে তাহেরের অপর তিন ভাই ড. আনোয়ার হোসেন, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও শাখাওয়াত হোসেন বাহারের অংশগ্রহণও ছিল প্রত্যক্ষ। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই পূর্ব ঘোষিত সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসি কার্যকরের নামে তাকে ‘ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা’ করা হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যে পরিবারের অনন্য ভূমিকা; সেই পরিবারের নির্দোষ এক দেশপ্রেমিককে ফাঁসি দেওয়ার দায়িত্ব তাদের কেউ দেয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু কর্নেল তাহেরই নন, আট ভাইবোন অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করেছেন দেশের প্রতি তাদের প্রেম ও মমত্ববোধের কথা।

যে ব্যক্তিটি দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন; দায়িত্ব পালন করেন একটি সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে গোটা জাতিকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল। অবশেষে আদালতের রায়ে দেরিতে হলেও সেই গ্লানি থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। অবাক হওয়ার বিষয়, মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা জেলা থেকে যে সাতজন খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কার্নেল তাহেররাই চার ভাই।

কর্নেল তাহের বা তার পরিবারের সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধের অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আজ শুধু এটুকুই বলা যায়, তাহেরের মতো মহান বীর যোদ্ধাকে যারা ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল, তাদের বিচার হওয়া উচিত এবং এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।

আজ যারা কর্নেল তাহের মেলার আয়োজন করেছেন, সত্যিই এটা খুব আনন্দের বিষয়। নতুন প্রজন্ম এখান থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিতে পারবে। আসুন আমরা সবাই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠি।

লেখক: ‘সংবাদ’-এর সিলেট প্রতিনিধি

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০১১
ঈদুল আজহার আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি বই লেখার বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আনোয়ার হোসেন স্যারের সঙ্গে। কথার ফাঁকে তিনি আমাকে জানান, ১৮ নভেম্বর টিএসসিতে কর্নেল তাহেরমেলা অনুষ্ঠিত হবে। আমি তাকে বিনয়ের সঙ্গে ওই মেলায় উপস্থিত থাকবো বলে জানাই এবং ১৪ নভেম্বর তাহেরের জন্মদিন নিয়ে কিছু লিখার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু নেত্রকোনার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রায় সাড়ে ৩শ’ পৃষ্ঠার যে বইটি লিখছি; মূলত তার কারণেই সঠিক সময়ে জন্মদিনের লেখা হয়ে ওঠেনি। ফলে ১৪ নভেম্বরই কম্পিউটারের সামনে বসি কিছু লিখতে। কিন্তু কী লিখবো কর্নেল তাহেরকে নিয়ে? তার সম্পর্কে কিছু বলতে গেলেইতো হৃদয় কেঁপে ওঠে। মনে পড়ে যায় ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের কথা। ওই দিনটির কথা উল্লেখ করে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকার ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাকে হত্যা করে।

নভেম্বর মাসটি কর্নেল তাহেরের জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। এ মাসে একদিকে যেমন তার জন্ম, অপরদিকে সংগ্রামী জীবনের পথ চলা। কিন্তু ক্ষমতালিপ্সু চক্র তাকে বাঁচতে দেয়নি। আর তাইতো দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ২০১১ সালের ২২ মার্চ আবু তাহেরের গোপন বিচার অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, তাহের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের শিকার। ঠাণ্ড মাথায় এর পরিকল্পনাকারী ছিলেন জিয়াউর রহমান। রায়ে সামরিক আদালতে বিচারকে প্রহসনের ‘নাটক’ উল্লেখ করে তাহেরকে শহীদের মর্যাদা দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ সামরিক ট্রাইব্যুনাল যখন তার বিচার শুরু করে, সেদিন কর্নেল তাহের বীরদর্পে তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন। কিন্তু বার বার বিচারক তার বক্তব্যে বাধার সৃষ্টি করেছিলেন। বক্তব্যের শুরুতেই তাহের বলেছিলেন- ‘আপনাদের সামনে দণ্ডায়মান এই মানুষটি, যে মানুষটি আদালতে অভিযুক্ত- সেই একই মানুষ এ দেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য রক্ত দিয়েছিল, শরীরের ঘাম ঝরিয়েছিল। এমনকি নিজের জীবন পর্যন্ত পণ করেছিল। এটা আজ ইতিহাসের অধ্যায়। একদিন সেই মানুষটির কর্মকা- আর কীর্তির মূল্যায়ন ইতিহাস অতি অবশ্যই করবে। আমার সকল কর্মে, সমস্ত চিন্তায় আর স্বপ্নে এই দেশের কথা যেভাবে অনুভব করেছি, তা এখন বোঝানো সম্ভব নয়। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। এই দেশের সঙ্গে আমি রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। আর এরা কিভাবে অস্বীকার করে এই দেশের অস্তিত্বে আমি মিশে নেই। যে সরকারকে আমিই ক্ষমতায় বসিয়েছি, যে ব্যক্তিকে আমিই নতুন জীবন দান করেছি, তারাই আজ এই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আমার সামনে এসে হাজির হয়েছে। এদের ধৃষ্টটা এতো বড়ো যে তারা রাষ্ট্রদ্রোহিতার মতো আরো অনেক বানানো অভিযোগ নিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থা করেছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার সবই বিদ্বেষপ্রসূত, ভিত্তিহীন, ষড়যন্ত্রমূলক, সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি সম্পূর্ণ নিরপরাধ।’

হ্যাঁ, যুগে যুগে নরপিশাচ, বিশ্বাসঘাতকদের কাহিনী আমরা শুনে আসছি। প্রথম দিকে আমরা যে যাই বলি না কেন, পরবর্তী সময়ে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। যেমনটি ৩৫ বছর পর ফিরে এলো শহীদ তাহেরের জীবনে; তিনি কোনো অন্যায় করেননি, ক্ষমতার লোভে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তার এ বিশ্বাসবোধ নিয়েই সামরিক ট্রাইব্যুনালে বক্তব্য দিয়েছিলেন তাহের।

১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর এবং ২০১১ সালের ওই তারিখের মধ্যে চল্লিশ বছরের পার্থক্য। ১৪ নভেম্বর যে ব্যক্তির জন্মদিন অতিবাহিত হয়েছে তার সম্পর্কে নতুন করে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। তবে একটি যুদ্ধকাহিনী সংক্ষিপ্তভাবে না বললেই নয় এ কারণে যে, জন্মদিনেই এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ কামালপুর যুদ্ধ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। আর ওই দিনই পা হারান শহীদ কর্নেল আবু তাহের।

তার অনুজ সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীর প্রতীক (বার) এ যুদ্ধ বর্ণনা করে বলেন, ‘জন্মদিনটি তিনি বেছে নিলেন কামালপুর আক্রমণের জন্য। এর আগেও আমরা বেশ কয়েকবার কামালপুর আক্রমণ করে ব্যর্থ হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্দেশ দেওয়া হলো চারদিক থেকে কামালপুরকে ঘিরে ফেলো। আক্রমণের পুরো দায়িত্ব নিলেন কর্নেল তাহের। রাত ১১টার দিকে কামান্ডাররা কমান্ড পোস্টে অবস্থান নিলেন। ২১টি ফিল্ডগান ১৩টি মিডিয়াম গান এবং আরও কিছু হেভি গান নিয়ে রাত ১টায় গোলা নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে কর্নেল তাহের আক্রমণের সূচনা করলেন। রাত ৩টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ ভালো অবস্থান নিতে পারলেন। মুক্তিযোদ্ধারা তখন কামালপুর ক্যাম্প থেকে মাত্র ৩শ’ গজ দূরে। পাকিস্তানিদের বাঙ্কারগুলো দখলের জন্য মুক্তিযোদ্ধারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ সময় পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কার ছেড়ে আখ ক্ষেতে পালিয়ে যাচ্ছিল। ওদের টার্গেটে আনার জন্য তখন রাতের আকাশে red flair ছোড়া হচ্ছিল। ‘জয়বাংলা-জয়বাংলা’ ধ্বনি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ আরও শক্তিশালী করে তুলছিলেন। এ সময় কোম্পানি কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মিজান ওয়াকিটকিতে কর্নেল তাহেরকে জানান, তিনি পাকিস্তানিদের বাঙ্কারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই কর্নেল তাহেরের সঙ্গে লেফটেন্যান্ট মিজানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কর্নেল তাহের তখন কমান্ডার মিজানের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন। কর্নেল তাহের হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেই সামনে এগিয়ে যাবেন। কমান্ড পোস্ট ছেড়ে আমরা ক’জন তার সঙ্গে রইলাম। ইন্ডিয়ান আর্মির মেজর এস, আর, সিংকে তিনি বললেন, রিকোয়েলেম রাইফেল জিপের পেছনে টো করে নিয়ে আসতে এবং কামালপুর ক্যাম্পে প্রধান বাঙ্কার চার্জ করতে। আমরা বর্ডার রোড ক্রস করেই কমান্ডার মিজানকে পেয়ে গেলাম। মুক্তিযোদ্ধারা সেক্টর কমান্ডারকে নিজেদের মাঝে পেয়ে আরো সাহসী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানিদের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি কামালপুরের পতন তখন নিশ্চিত। পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কার ছেড়ে আখ ক্ষেতে আশ্রয় নিয়েছে। আমি একটি বাঙ্কারের ওপর দাঁড়িয়ে ওয়াকিটকিতে অন্যদের এ সংবাদ পৌঁছে দিচ্ছি। কর্নেল তাহের একটি বাঙ্কারের পাশে পজিশন নিয়ে কমান্ড করছিলেন। হঠাৎ একটি শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি, কর্নেলের একটি পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন।’

নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা উপজেলার কাজলা গ্রামের সাবেক রেলওয়ে কর্মকর্তা মরহুমদ মহীউদ্দিন আহমেদের পুত্র কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তম। বাবা রেলওয়েতে চাকরি করার সুবাদে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। ১৯৩৮ সালের ১৪ নভেম্বর আসামের বদরপুর রেলওয়ে স্টেশনে নানার বাসায় আবু তাহের যখন জন্ম নেন, তখন বাবা নোয়াখালীর হরিনারায়ণপুরে কর্মরত।

আবু তাহের ১৯৫৫ সালে কুমিল্লা থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। সেখানে থাকার সময় তাহের উদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে তার বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিল। ঠাকুর সে সময় ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। ম্যাট্রিক পাস করে তিনি সিলেটের মুরারীচাঁদ (এমসি) কলেজে ভর্তি হন। সেখানে মার্কসীয় সাহিত্যের সঙ্গে তাহেরের পরিচয় ঘটে। তার অনুজ ড. আনোয়ার হোসেনের ভাষায়, ‘তাহের ভাইয়ের এমসি কলেজের সহপাঠী মোহম্মদ হোসেনের কাছে শুনেছি, কলেজে থাকার সময়েই ১৯৫৬ সালেই তাহের ভাই পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম গড়ে তোলার কথা ভাবতেন। বলতেন, ‘স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করতে হবে আমাদের।’

হোসেন সাহেবের মতে, তাহেরকেই তারা আগামী দিনের সে লড়াইয়ের নায়ক ভাবতেন। সে কারণে একটি বিশেষ সম্বোধনও করা হতো তাকে।

১৯৫৯ সালে বিএ ডিগ্রি লাভ করার পর কিছুদিন চট্টগ্রাম মিরেরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা শুরু করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেনের একজন ঘনিষ্ট সহযোগী। বস্তুতঃ প্র্রধান শিক্ষকের সংস্পর্শে থেকেই আবু তাহের বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হন। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণের ছাত্র থাকাবস্থায় সেনাবাহিনীর কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে গ্রহণ করেন কমান্ডো প্রশিক্ষণ। তখন পাক-ভারত যুদ্ধে শিয়ালকোট রণাঙ্গনে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য পুরস্কৃত হন।

তিনি ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন সুদক্ষ কমান্ডো অফিসার। ১৯৬৯ সালে আমেরিকার ফোর্টব্রাগ ও কোট বেনিং থেকে উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণ ও সামরিক বিদ্যায় ডিগ্রী লাভ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কোয়েটার স্টাফ কলেজে কর্মরত ছিলেন। ২৫ জুলাই অ্যাবোটাবাদ দিয়ে পালিয়ে ভারতে চলে আসেন। যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। জরুরি বৈঠক করে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানী তাকে এগারো নম্বর সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব দেন। ১৪ নভেম্বর ধানুয়া-কামালপুর রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আবু তাহের এক মুখোমুখি যুদ্ধে উপনীত হন। তখন হানাদার বাহিনীর একটি সেলের আঘাতে তিনি আহত হয়ে হাসপাতালে স্থানান্তরিত হন। ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসেন এবং প্রথমে সেনাবাহিনীর এডজুটেন্ট জেনারেল নিযুক্ত হন। পরে কুমিল্লা সেনানিবাসের অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তখন ব্যারাকবন্দী সেনাবাহিনীর বদলে কর্মভিত্তিক গণবাহিনী গড়ে তোলার প্রশ্নে ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে তার মতবিরোধ দেখা দেয়। ফলে তিনি সেনাবাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে সরকার তাকে সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইবুন্যালের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন। কিন্তু সরকারের ইচ্ছেমতো রায় না দিয়ে তিনি মেজর জলিলকে নির্দোষ বলে রায় ঘোষণা করলে সরকারের রোষানলে পড়েন। এক পর্যায়ে তাহের জাসদ রাজনীতিতে যোগদান করেন এবং ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী বিপ্লবের নেতৃত্ব দেন। এতে তাহেরের অপর তিন ভাই ড. আনোয়ার হোসেন, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল ও শাখাওয়াত হোসেন বাহারের অংশগ্রহণও ছিল প্রত্যক্ষ। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই পূর্ব ঘোষিত সামরিক আদালতের রায়ে ফাঁসি কার্যকরের নামে তাকে ‘ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা’ করা হয়।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে যে পরিবারের অনন্য ভূমিকা; সেই পরিবারের নির্দোষ এক দেশপ্রেমিককে ফাঁসি দেওয়ার দায়িত্ব তাদের কেউ দেয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধে শুধু কর্নেল তাহেরই নন, আট ভাইবোন অংশগ্রহণ করে প্রমাণ করেছেন দেশের প্রতি তাদের প্রেম ও মমত্ববোধের কথা।

যে ব্যক্তিটি দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন; দায়িত্ব পালন করেন একটি সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে গোটা জাতিকে কলঙ্কিত করা হয়েছিল। অবশেষে আদালতের রায়ে দেরিতে হলেও সেই গ্লানি থেকে জাতি মুক্তি পেয়েছে। অবাক হওয়ার বিষয়, মুক্তিযুদ্ধে নেত্রকোনা জেলা থেকে যে সাতজন খেতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কার্নেল তাহেররাই চার ভাই।

কর্নেল তাহের বা তার পরিবারের সদস্যদের মুক্তিযুদ্ধের অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আজ শুধু এটুকুই বলা যায়, তাহেরের মতো মহান বীর যোদ্ধাকে যারা ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল, তাদের বিচার হওয়া উচিত এবং এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে।

আজ যারা কর্নেল তাহের মেলার আয়োজন করেছেন, সত্যিই এটা খুব আনন্দের বিষয়। নতুন প্রজন্ম এখান থেকে অনেক কিছু শিক্ষা নিতে পারবে। আসুন আমরা সবাই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জেগে উঠি।

লেখক: ‘আকাশ চৌধুরী, সাংবাদিক, সংবাদ’-এর সিলেট প্রতিনিধি